পেকুয়া প্রতিনিধি:

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কক্সবাজারের পেকুয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ কার্যক্রম। শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় পেকুয়া উপজেলার প্রবাহমান মাতামুহুরি নদীর মেহেরনামা অংশে এ কার্যক্রম আয়োজন করে পেকুয়া উপজেলা সমাজ কল্যাণ পরিষদ।

“পোনা অবমুক্ত করি, প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ করি”—এ স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সহস্রাধিক দেশীয় ও চাষযোগ্য প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। পোনাগুলোর মধ্যে ছিল রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ, শিং এবং নাইলেটিকা (তেলাপিয়া)।

সংগঠনের সদস্য ও স্থানীয় পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের উপস্থিতিতে এই উদ্যোগে নদীতে পোনা ছাড়ার মধ্য দিয়ে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলজ খাদ্যচক্র রক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মাছের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আরমান বিন কাশেম, নাঈমুল আবেদীন, আবদুল হাকিম আসবাদ, আবদুল হামিদ, ইফতেখার উদ্দীন, আরিফুল ইসলাম, এই.এম. গোলাম আজম প্রমুখ।

এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, জলজ পরিবেশে মাছের স্বাভাবিক পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়াকে সচল রাখতেই তারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা বলেন, নদ-নদী ও জলাশয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন কারণে দেশীয় মাছের প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে।

আরমান বিন কাশেম বলেন, “আজকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস হয়তো সামগ্রিক সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট নয়, তবে এটি সচেতনতার একটি শুভ সূচনা। আমরা চাই আমাদের নদীগুলো প্রাণ ফিরে পাক, দেশীয় মাছগুলো আবারও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকুক।”

বাংলাদেশে জলজ জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে। নদ-নদী ও খালবিলের দখল, দূষণ, অপরিকল্পিত মাছ ধরা, এবং অভয়াশ্রম না থাকায় অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এমন পরিস্থিতিতে উন্মুক্ত জলাশয়ে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা টেকসই মৎস্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করা সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বলছে, স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে নদী ও জলাশয়ভিত্তিক প্রাকৃতিক পরিবেশ আরও সমৃদ্ধ হবে।

পেকুয়া উপজেলা সমাজ কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানান, “আমরা প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দিতে চাই তার হারানো প্রাণচাঞ্চল্য। আসুন, সবাই মিলে গড়ি একটি বাসযোগ্য, জীবন্ত ও সবুজ পৃথিবী। দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রকৃতি ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করি।”